মৃত্যু যখন দেখা গিয়েছে সামনের আকাশে, তখন প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রিয় ছাত্রদের কথা বলতেন আপন মনে। বিশেষ করে শ্যাম থাপা ও সুভাষ ভৌমিক। যখন কোচিং পৃথিবী ছেড়ে সবে বেরিয়েছেন পিকে, তখনও যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে দুজ
ের কথা বলতেন দ্বিধাহীন। সুভাষ ভৌমিক এবং সুব্রত ভট্টাচার্য। বাঙালির মায়ার কাজল মাখা সত্তর দশকে আন্তর্জাতিকতার নিরিখে সেরা বাঙালি ফুটবলার কে? প্রশ্ন করলে ভারতের সর্বকালের সেরা ফুটবল ব্যক্তিত্বের মুখে উঠে আসত দু’জনের নাম। সুভাষ ভৌমিক এবং সুধীর কর্মকার। পিকে-র মতোই তাঁর প্রিয় ‘ভোম্বলবাবু’ ধারালো তরবারি হয়ে বাঙালির চিরকালীন প্রিয় দুই মাঠে দেখা দিয়েছেন বারবার। ফুটবলারের জার্সিতে, পেনাল্টি বক্সের ধারেকাছে। কোচের জার্সিতে, রিজার্ভ বেঞ্চের সামনে। পিকের মতোই তাঁর গতি ও লাবন্যমাখা ফুটবলে লেগে থাকত আন্তর্জাতিকতার ছাপ। গুছিয়ে অনর্গল কথা বলার জন্য, আন্তর্জাতিক ফুটবলের মানচিত্র বুকের ভিতরে এঁকে ফেলার জন্য। উচ্চকিত আবেগে এবং অনেক বড় স্বপ্নে সুভাষ খেলা ছাড়ার পরেও থেকে গিয়েছেন পরবর্তী প্রজন্মের ফুটবলারদের কাছের মানুষ। আমৃত্যু তাঁর হৃদযন্ত্র, শিরা ও ধমনীতে রক্তের সঙ্গে বয়ে চলত ফুটবল চিন্তার স্রোত। সেই অনির্বাণ ফুটবল-প্রদীপই চরাচরে যেন সুভাষকে একাকার করে দিয়ে যায় গুরু প্রদীপের সঙ্গে।সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠরা হালফিল তাঁর সঙ্গে প্রয়াত গায়ক পীযূষকান্তি সরকারের একাধিক মিল আবিষ্কার করছেন। পীযূষের আত্মপ্রকাশকারী ক্যাসেটের ইনলে-তে লেখা হয়েছিল, শিল্পী প্রথম বিখ্যাত হলেন তাঁর আটান্ন বছর বয়েসে। সুপ্রিয় তেমনই পয়লা নম্বর দৈনিকে তিনদশকের বেশি সাংবাদিকতা করেও কলেজ স্ট্রিটের পাদপ্রদীপের আলোয় প্রথম এলেন সিনিয়র সিটিজেন হওয়ার কয়েকমাসের মধ্যে। ‘গুরু’-র পর ‘গোল’ দুই মলাটের মাঝে তাঁর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সহলিখন। রসায়নে স্নাতকোত্তর হলেও খেলার মাঠের প্রতি চৌম্বকীয় আকর্ষণ তাঁকে ক্রীড়াসাংবাদিকতার ময়দানে চিরআবদ্ধ করে দিয়েছে। কভার করেছেন বিশ্বকাপ ক্রিকেট থেকে ডার্বি। ডেভিস কাপ থেকে কলকাতা ফুটবল। তর্কাতীতভাবে আনন্দবাজার পত্রিকার সর্বকালের সেরা স্পোর্টস টিমে তাঁর জায়গা বাঁধা। যদিও সাংবাদিকতার ভাষায়-বাইলাইনের সংখ্যা অনেক কম। মূল কাজ যে করে গিয়েছেন ব্যাকরুমে থেকে। মানে স্পোর্টস ডেস্কে। স্লগ ওভারে স্বীকৃতির চূড়ান্ত পোয়েটিক জাস্টিস হয়তো সুপ্রিয়র প্রাপ্য ছিল।
...