কুড়িটি গল্প নিয়ে তরুণ লেখক মৌসুমী মুখোপাধ্যায়ের এই গল্প সংকলন। মৌসুমী গল্প লেখেন আমার আপনার গা ঘেঁষে থাকা চরিত্রদের নিয়ে। কিন্তু গল্প-শেষে চরিত্রগুলো কখনও চেনা থেকে অচেনা হয়ে যায়। আবার কখনও চেনা থেকে আশ্চর্
য আপনজন হয়ে ওঠে।
মৌসুমী কাহিনি নির্ভর গল্প লেখেন। যার চৌম্বকক্ষেত্রে ঢুকে পড়লে আপনি থামতে পারবেন না। আবার এই মৌসুমীই গল্পের শেষ আপনাকে স্তব্ধ করে দেয়। তাঁর গল্পের অনুভূতি এতই তীব্র।
‘সুহাসিনীর একটি দিন’ গল্পের সুহাসিনীকে পড়তে পড়তে মনে হয় বড়ই চেনা। কম বেশি যেন আমি বা আপনি নিশ্চয়ই দেখেছি। কিন্তু কাহিনির শেষে লেখক যেখানে নিয়ে এসে সুহাসিনীকে দাঁড় করিয়ে দেন, তা আমাদের স্তম্ভিত করে দেয়। না, না, গল্প শেষে এক লাইনে চমক বা গিমিক নয়। বরং অদ্ভুত এক বাস্তবতার ভেতর দাঁড়িয়ে আমরা নতুন সুহাসিনীকে দেখি। হয়তো নিজেকেও দেখতে পাই। মনে হয়, এ তো আমি। বা এ তো আপনি। তখনই এ গল্প আপনাকে স্তব্ধ করে দেবে।
মৌসুমী সোজা ভাষায় গল্প বোনেন। তাই এই গল্প শেষ হয়েও একটা ভালোলাগার রেশ থেকে যায়।
‘পুকুর’ গল্পটিকে আমি যদি বলি এটি একটি ভৌতিক গল্প। আপনি কিন্তু তর্ক জুড়তেই পারেন, বলতেই পারেন— এ কাহিনি প্রেমের। আসলে ‘পুকুর’ গল্পটি নিছক ভূত গল্প, বা প্রেমের গল্প নয়। গল্পটি উপলব্ধির।
ঠিক তারই পাশাপাশি ‘চক্র’ গল্পটি আপনাকে বেসামাল করে দেবে। এই গল্পের শেষ শব্দটি আপনাকে বুকের ভেতর একটা আঁচড় কেটে দেবে। সার্থক ছোট গল্প। আবারও বলি, চমক বা গিমিক নয়। মৌসুমীর গল্প দাঁড়িয়ে থাকে তীব্র অনুভূতিতে। এই অনুভূতির ক্ষরণেই শেষ শব্দটি লেখা হয়। আজীবন মনে থেকে যাবে এই গল্পটির শেষ শব্দটি।
এই সংকলনের শেষ গল্প ‘অনাবর্ত’। বোষ্টমদের এক আখড়া তোলার দায়িত্ব নিয়ে আশ্রমে সেঁধিয়েছে নেপাল। তাকে এই কাজের দায়িত্ব দিয়েছে তার দীনেশদা। আখড়াটা তুলে দিতে পারলে অনেক টাকা পাবে দাগী আসামি নেপাল। কিন্তু এখানে এসে নেপাল অদ্ভুত এক সম্পর্কের বাঁধনে ক্রমশ নিজেকে বিপন্ন করে ফেলে।
এরকমই ২০টি ভিন্ন স্বাদের গল্পের ডালি এই সংকলন -- ‘এক ঝুড়ি কুড়ি’।
...