CURRENTLY OUT OF STOCK
চকিতে তার সামনের পায়ের দাবনায় মোচড় তুলে ধাঁ করে নেমে গেল বাঁ-হাতি রাস্তাটায়।
এটি কোনও শাহি সড়ক নয়, গাঁওয়ালি রাস্তা। তাঁর মাঝেমধ্যে ইচ্ছে হয় এরকম অচেনা রাস্তায় ঘোড়া ছুটিয়ে আবিষ্কার করতে নতুন নতুন পথ, নতুন নতুন
গাঁও। গাঁওয়ালি রাস্তা বলে একটিও বড়ো গাছ নেই, দুপাশে মাঠখেতি আর গুল্মলতা। দেখা দিচ্ছে এক-একটা টিলা, কোনওটা রুক্ষ, কোনওটায় বুনোঘাস জন্মে সবুজ হয়ে আছে তাদের গা।
তীক্ষ্ণ বল্লমের মতো শরীর ফুঁড়ে ফেলছে গনগনে হয়ে ওঠা রোদ্দুর, ঘোড়ার খুরের ডগায় ছিটকে উঠছে লালরঙা ধুলো, লাল ধুলোর মাথার উপর আগুনের হলকা আরও শরীর-পোড়ানো।
একনাগাড়ে বহুক্ষণ ঘোড়া ছুটিয়ে যখন ঘামছেন দরদর করে, সেসময় হঠাৎ চোখে পড়ল একটা মস্ত পিপ্পল গাছ। এরকম বিশাল ছাতাওলা পিপ্পল গাছ সচরাচর চোখে পড়ে না। এত বড়ো গাছটার কাণ্ডই যেন একটা হাবেলি। কাণ্ডের নিচের দিকে অসংখ্য শিকড়বাকড়। এক-একটা শিকড় এমনই প্রশস্ত যে, তার উপর মাথা ঠেকিয়ে নিদ দেওয়া যায়। ঠাসবুনোটি গাঢ় সবুজ পাতার রাশি মাথায় নিয়ে আকাশের নিচে যেন আর এক আকাশ। তবে এই আকাশের রং সবুজ। তিনি এ রাস্তায় আজই প্রথম বলে আবিষ্কার করতে পারলেন গাছটা। এতক্ষণ প্রবল দহনে পুড়ে হঠাৎ পিপ্পল গাছটা দেখে তার ছায়ায় এসে ঘোড়া থামালেন ঘোড়সওয়ার। একশো কি দেড়শো বছরের পুরোনো পিপ্পল গাছ, তার ছায়া ঘিরে আছে একটা মস্ত দিঘির মতো জায়গা। সেই ছায়ার স্নিগ্ধতা এমনই যে, পথচারী যত আছে, এই পিপ্পল গাছের নিচে এলে দু-দণ্ড জিরেন নেবেই নেবে।
একটানা বহু মেটেপথ লাল ধুলোর রাশি ছেটানোর পর তাগড়াই আশিক গতিতে যতি দিয়ে থেমে গেল পিপ্পল গাছের ছায়ার নীচে এসে। ঘোড়সওয়ার লাফ দিয়ে নামলেন এবড়ো-খেবড়ো মাটির উপর। গম্ভীর হয়ে দেখলেন একটু দূরে পিপ্পল গাছের শিকড়ে হেলান দিয়ে বেহুঁশ হয়ে অঘোরে ঘুমোচ্ছে দুই গাঁওয়ালি। ঘুম এতটাই গভীর যে, আশিকের দুরন্ত খুরের শব্দও জাগিয়ে তুলতে পারল না তাদের। পরের মুহূর্তে তাঁর নজরে পড়ল ছায়ায় জিরোচ্ছে আর এক আদমি। মামুলি আদমি নয়, কোনও রইস আদমি। বাবরি চুল, চুলে টেরি কাটা, লম্বা জুলফি, পরনে দুধসাদা আচকান আর তেমনই সাদা ধৌতি। দুটো নগ্ন পায়ের পাশে জিরোচ্ছে কাঁধ-উঁচু চপ্পল। পিপ্পল গাছের কাণ্ডে পিঠ ঠেকিয়ে ঝিমোচ্ছিলেন বোধ হয়, ঘোড়ার শব্দ থামতেই তার চোখ দুটো খুলে গেলে সহসা।
এক অচেনা ঘোড়সওয়ার ঘোড়া ছুটিয়ে এসেছেন একা, তাঁকে কিছুক্ষণ স্থির চোখে নিরিখ করে সেই রইস আদমি কিছুক্ষণ বোঝার চেষ্টা করলেন এই আদমি কে, একাকী ভ্রমণরত এক ঘোড়সওয়ারকে দেখে বুঝতে পারার কথা নয় তাঁর আদত পরিচয়, তবু চোখ খুলে সতর্ক দৃষ্টি রাখলেন তাঁর দিকেই। তাঁকে চিনতে পারেননি, অনুমান করেছেন কেউকেটা হবেন হয়তো। পোশাকআশাক দেখে মনে হতে পারে কোনও আমির-উম্মাহ! গায়ের রং ফরসাও নয়, শ্যামলাও নয়। চওড়া কপাল, বাঁ-নাকের ঠিক নিচে একটা ছোট্ট আঁচিল। সরু গোঁফজোড়া। দু'চোয়াল কামানো, ঝকঝকে। হাঁটার সময় ডান কাঁধের দিকে ঝুঁকে থাকে মাথাটা। হাঁটার সময় বাঁ-পা সাামান্য টেনে চলেন। মাথায় তুর্কি টোপি, পরনে নীল মখমলের শেরওয়ানি, সাদা ধবধবে চুস্ত। পায়ে বাহারি জুতা।
...