১৯৭৫ সাল। সাতাশি বছর অন্তরালে থাকার পরে ব্রিটেনের মাটিতে যেন ফিরে এসেছিল জ্যাক দ্য রিপারের প্রেতাত্মা। ভিক্টোরিয়ান যুগের কুখ্যাত সিরিয়াল কিলারের মতোই লিডস-ব্র্যাডফোর্ড-ম্যানচেস্টার অঞ্চলে আবির্ভূত হয়েছ
ল এক অদৃশ্য আততায়ী যার ছুরির আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছিল একের পর এক মহিলার শরীর। ভিক্টোরিয়ান রিপারের মতোই প্রথমদিকে এই খুনির নিশানা ছিল দেহপসারিণিরা। কিন্তু ক্রমশ হত্যালীলার পরিধি বেড়ে চলেছিল, মহিলা মাত্রেই খুনির শিকার হচ্ছিল। আততায়ীর হাতে নির্বিচারে খুন হয়ে যাচ্ছিল সুপারমার্কেটের সেলসগার্ল, ব্যাঙ্ককর্মী, ছাত্রী, সরকারি আমলা প্রমুখ। হত্যাকাণ্ডের নৃশংতা দেখে সংবাদমাধ্যম সঙ্গত কারণেই এই অদৃশ্য খুনির নামকরণ করেছিল ‘ইয়র্কশায়ার রিপার’। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সালের মধ্যে ইয়র্কশায়ারের বুকে নরক নামিয়ে এনেছিল এই খুনি। পুলিশি পাহারা আর তদন্তকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে একের পর এক মহিলাকে মাথা থেঁতলে, ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করে রাতের আঁধারে মিলিয়ে যাচ্ছিল জ্যাক দ্য রিপারের বিশ শতকের অবতার। পুলিশি ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার নিজের হাতে তদন্তের দায়িত্ব তুলে নিতে চেয়েছিলেন। দীর্ঘ ছ’বছর ধরে তেরোজন মহিলাকে খুন এবং ন’জন মহিলাকে গুরুতর জখম করার পর পচা শামুকে পা কেটেছিল আততায়ীর, ভুয়ো নম্বর প্লেট ব্যবহার করে গাড়ি চালানোর অভিযোগে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের সময় বেরিয়ে আসে তার আসল পরিচয়। পিটার উইলিয়াম সাটক্লিফ ওরফে ইয়র্কশায়ার রিপারের গ্রেফতারির সংবাদে স্বস্তি নেমে আসে ব্রিটেনের বুকে।
ব্রিটেনের অপরাধের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিদিন ধরে চলা অনুসন্ধানের অন্যতম ইয়র্কশায়ার রিপার তদন্ত যার পিছনে ব্যয় হয়েছিল ছয় মিলিয়ন পাউন্ড। সেই তদন্তের তথ্যনিষ্ঠ দলিল এই বই, যা বাংলাভাষায় লেখা ট্রু-ক্রাইম জঁরের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসাবে চিহ্নিত হবে বলে বিশ্বাস।
...