একবার বইমেলা মাঠে সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘বাঙালি লেখকেরা নাবালক। তারা যৌনতার গল্প লিখতে ভয় পায়।’ সে অনেক কাল আগের কথা, তখন আমি সবে লেখালিখি শুরু করেছি। সে সময় সবাই বুদ্ধদেব বসুর ‘রাতভর বৃষ্টি’র কথাই
লতে পারত। তারপর বাংলা সাহিত্য অনেক সাহসী হয়েছে, অবশ্যই সাহিত্যসম্মত। কাঁচা যৌনতাধর্মী গল্প উপন্যাস সব কালেই ছিল, এখনও আছে দেদার। কিন্তু স্বপ্নময় চক্রবর্তীর একটা ‘হলদে গোলাপ’এর জন্য বাংলা সাহিত্যকে দীর্ঘঅপেক্ষা করতে হয়েছে। স্বপ্নময় চক্রবর্তী সাহসী লেখা ‘হলদে গোলাপ’ বাংলা গল্প উপন্যাসকে একটা ভিন্ন বাঁকে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
এই বইয়ের আমার সব গল্পের বিষয়ই যৌনতা। যে যৌনতা নেশা ধরায়, যে যৌনতা নাশকতায় ইন্ধন দেয়। নিজেকে বা অপরকে ধ্বংস করে। তছনছ করে। ফিরে দেখে, ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ করে।
তবু বলি, আমি ঠিক ততটা সাহসী নই, যতটা হওয়ার দরকার ছিল। আমার এই গল্পগুলোর যৌনতা শরীরকে সঙ্গী করেই মনেই বেজেছে বেশি। শরীর যেখানে যতটা কথা বলার দরকার ছিল, আমি তা বলেছি, আমার মতো করে। কোনও কোনও গল্পে মনে মনেই বারুদ জ্বলেছে, শরীর পোড়াতে পারেনি। আসলে আমি অহেতুক, নারী-পুরুষকে বিছানায় নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিতে চাইনি। তাদের মনের ভেতরের চাপা যৌনতা আমাকে আকৃষ্ট করে বেশি। আমি সেই পথেই চলেছি। ভালোবাসাকে আগুন আঁচে সেঁকলেই সেটা যেমন যৌনতা হয়, আবার যৌনতাকে আচ্ছা করে স্নান করালে সেটা ভালোবাসা হয়-- এ একটা সহজ ধারণা। এ গল্পগুলো ঠিক এই ফ্রেমে বন্দি নয়। যেমন, পূর্ণিমার মেডিকেল শপে কুশল কনডোম কেনে। গল্পটি প্রতিদিন শারদীয়ায় প্রকাশিত হয়। একজন পাঠক আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনি কখনও পূর্ণিমার মতো কাউকে দেখেছেন?
আমি তাকে উত্তর দিইনি। আসলে যে কোনও সাহিত্যে বহুদূর কল্পনা থাকে, কিছুটা বাস্তব। আবার উলটোও হতে পারে, বাস্তবের পথ গিয়ে কল্পনায় মেশে। দু-দশটা কাঁচা খিস্তি দিলেই যৌনতার গল্প হয় না।
ভাড়ার মেয়েদের চেনেন, ভাড়ার পুরুষদের কি চেনেন? তেমনই এক চরিত্র ‘রাজ’।
‘মরবে ইঁদুর বেচারা’ আমার সাম্প্রতিক প্রকাশিত গল্প। এই গল্পের মেয়েটির মতো অনেকেই কিন্তু আমাদের কাছাকাছি খুঁজে পেয়ে যাবেন। যারা মনের কালি হিসহিস করে অনবরত বিষের মতো অন্যদের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে যায়। এই কালি ছোঁড়া একটা নেশা। হয়তো নাশকতাও।
--- জয়ন্ত দে
...